আমেরিকার ‘মা বোমা’র জবাবে রাশিয়ার ‘বাবা বোমা’
গত ১৩ এপ্রিল আফগানিস্তানে বৃহৎ আকারের বোমা নিক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, এটিই সর্ববৃহৎ অপারমাণবিক বোমা। যুক্তরাষ্ট্র এর নাম দিয়েছে, ‘এটি সব বোমার মা।’ তবে এর একদিন পরই রাশিয়া নিজেদের এক বোমা দেখিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ওই ‘মা বোমা’র চেয়ে নিজেদের বোমা ওজনে চারগুন বেশি!
রাশিয়ার দাবি, আফগানিস্তানে নিক্ষেপ করা বোমা যদি ‘সব বোমার মা’ হয় তবে রাশিয়ার কাছে আছে ‘সব বোমার বাবা’। বৈশিষ্ট্যে উভয় বোমার একটি মিল আছে; উভয়েই অপারমাণবিক বোমা।
দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওজনে ও ক্ষমতায় রাশিয়ার বোমাটি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চারগুণ। বোমায় সাধারণত যা ব্যবহৃত হয় তাই আছে ‘মা বোমা’য়। তবে ‘বাবা বোমা’য় আছে এরচেয়ে বেশি কিছু। লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে পুড়িয়ে দেয় ‘বাবা বোমা’। ওই বোমায় অক্সিজেন দিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং প্রকৃতি থেকেই অক্সিজেন সংগ্রহ করে নেয় ওই বোমা। শক্তিমত্তায় অন্যান্য বিস্ফোরকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর রাশিয়ার ওই বোমা। রাশিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মা বোমা’র ওজন ১১ টন। যেখানে রাশিয়ার ‘বাবা বোমা’র ওজন ৪৪টন!
২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বোমাটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে রাশিয়া। মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর থেকেই এ ধরনের বোমা তৈরির ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির সমালোচনা করেন। তবে নিজেও যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শক্তির প্রদর্শন করেন ।
গত ১৩ এপ্রিল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলে আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বোমাটির নাম দেওয়া হয়েছে, ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট (এমওবি)। তবে আইএস নিধনের জন্য ওই বোমা বানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালে তা ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়। তবে তা ইরাকে ব্যবহার করা হয়নি।
মার্কিন সেনাসূত্রে জানা যায়, এমসি-১৩০ বিমান থেকে বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়। আফগানিস্তানের নানগড়হার প্রদেশের আচিন জেলায় ওই হামলা করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাওলাত ওয়াজিরি দাবি করেন, ওই বোমা হামলায় কোনো বেসামরিক মানুষ নিহত হয়নি। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক ব্যক্তিরা নিহত হয়নি। বরং আইএসের ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাডাম স্টাম্প জানান, বোমাটি একটি গুহার মুখে ফেলা হয়। ধারণা ছিল, ওখানেই আইএসের লোকজন আছে।
আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ডব্লিউ নিকলসন জানিয়েছেন, আইএস ধ্বংস করার পরিকল্পনা থেকেই ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। তিনি আরো জানান, আইএসও বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে নিজেদের সংগঠিত করছে।
মা বোমার সাতকাহন
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বোমা। এর নাম ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট (এমওএবি)। বিবিসি জানিয়েছে, সামরিক পরিভাষায় ওই বোমাকে বলা হয়েছে, ‘মাদার অব অল বোম্বস’ বা সব বোমার মা।
ব্যবহৃত বোমাগুলোর মধ্যে শীর্ষে
এমওএবি নামে ওই বোমার ওজন নয় হাজার ৮০০ কেজি। এটি বিস্ফোরকে ঠাসা। এ পর্যন্ত যত বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। বোমাটি লম্বায় ৩০ ফুট। এ রকমটি একটি বোমা তৈরির জন্য খরচ হয় প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার।
বড়সড় কলম!
বোমাটি দেখতে কলমের মতো। সামনের দিকটি ধারালো। এর শরীরে দুটি পাখাও আছে। এর বাইরের দিকটি অ্যালুমিনিয়ামে মোড়ানো। আর এ কারণেই এর বিস্ফোরণের মাত্রা আরো বেশি ছড়িয়ে যায়।
অন্য বোমার চেয়ে একটু আলাদা
এমওএবি যেকোনো গুহা, টানেলে প্রবেশ করে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এসব এলাকা ধ্বংস করার জন্য এর জন্ম। অন্যান্য বোমায় যেমন সরু পথ, গুহা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারে না, সেখানে এমওএবি কার্যকর। আর এ কারণেই আফগানিস্তানের এক গুহামুখে তা নিক্ষেপ করা হয়।
ভয়াবহতা
এক মাইল এলাকার মধ্যে যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর এটি ১৮ হাজার পাউন্ড টিএনটি ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। ভূমিতে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে সক্ষম বোমাটি। এমনকি ভূগর্ভস্থ বাংকার বা টানেলকেও ধ্বংসস্তূতে পরিণত করে দিতে পারে ওই বোমা।
তৈরির উদ্দেশ্য
আইএস নিধনের জন্য ওই বোমাটি বানানো হয়নি। ২০০৩ সালে বোমাটি প্রস্তুত করা হয়। ইরাক যুদ্ধে ব্যবহার ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর ব্যবহৃত হয়নি।
প্রথম পরীক্ষা
২০০৩ সালে প্রস্তুত হওয়ার বছরই বোমাটির শক্তিমত্তা পরীক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রথম পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
প্রেসিডেন্টের অনুমোদন দরকার নেই!
যত ভারীই হোক না কেন, বোমাটি পারমাণবিক বোমা নয়। পারমাণবিক উপাদান না থাকায় প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিক্ষণ/এডি/রন